কোভিড-১৯ এমন একটি রোগ যা আমাদের ফুসফুস এবং শ্বাসনালীর ক্ষতি করে থাকে। করোনা ভাইরাস নামক ভাইরাসের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীন এর হুবেই প্রদেশের উহান শহরে এই রোগ সর্ব প্রথম ধরা পড়ে। করোনা নিয়ে আসলে নতুন করে বলার কিছু নেই। বাংলাদেশের সহ বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্রই এখন করোনাভাইরাস নিয়ে শঙ্কিত আছে। যদিও অনেক দেশ এর ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। কিন্তু এই মহামারীর শতভাগ কার্যকরী কোন ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। দিন দিন এর ভয়াবহতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কম বেশী সকলেই আমরা আসলে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানি। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে এই রোগের ভয়াবহতা হ্রাস করা সম্ভব। আজ বলবো করোনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা। যা হয়োতো আমরা অনেকেই জানি না। কিংবা জানলেও গুরুত্ব দিচ্ছি না।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে করোনার প্রধান চিকিৎসা:
সত্যি কথা বলতে বর্তমানে সর্বপ্রথম চিকিৎসা হচ্ছে মাস্ক ব্যাবহার করা। যেহেতু আমাদের সব বয়সী নাগরিকদের এখনো ভ্যক্সিনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না তাই আমাদের সকলের উচিৎ মাস্ক পরিধান করা সব সময়। মাস্ক হলো এখন করোনা মোকাবেলায় আমাদের প্রধান হাতিয়ার। অবশ্যই এন ৯৫ অথবা সার্জিকাল মাস্ক পরা জরুরী। দুইটি সার্জিকাল মাস্ক পরতে পারলে আরো নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। বাজারের অন্যান্য কাপরের মাস্ক গুলো অতোটা কার্যকরী নয়। আর অবশ্যই অন্যান্য স্বাস্থবিধি মেনে চলতে হবে এবং প্রতিনিয়ত হাত ধোঁয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এ রোগের সংক্রমণ এড়াতে নিয়মিত সাবান/এলকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা, হাঁচি বা কাশির সময় নাক ও মুখ ঢেকে ফেলা, ডিম ও মাংস অধিক সময় ধরে সিদ্ধ করে রান্না করা এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগের লক্ষণ যেমন হাঁচি কাশি আছে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শে না যাওয়া জরুরী।
বর্তমানে করোনাভাইরাস এর যেসব উপসর্গ দেখা যায়ঃ
বিগত বছরের মতো এবারও শ্বাসকষ্ট, জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, ঘ্রাণ শক্তি কমে যাওয়া কিংবা একেবারে লোপ পাওয়া, স্বাদ কমে যাওয়া, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। তবে কোন উপসর্গ ছাড়াও অনেকেই করোনা পজিটিভ হচ্ছেন।
যেসব বয়সের মানুষ বেশী করোনা পজিটিভ হচ্ছেঃ
পজিটিভ হওয়ার ব্যাপারটি আসলে প্রতিটা মানুষের নিজের সচেতনতার উপর নির্ভর করে। যেমন আপনি মনে করেন যে অনেক মানুষ মাস্ক পড়ছে না। এখন যারা মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করছে কিন্তু নিজেও যানে না যে সে করোনা পজিটিভ সেক্ষেত্রে তাদের মাধ্যমে অন্য মানুষের শরীরে করোনা ছড়াচ্ছে। পজিটিভ হওয়ার ব্যাপারটি অনেক মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে যারা ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, হৃদরোগ এবং অন্যান্য জটিল রোগে ভুগছেন তাদের এ রোগে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে।করোনা একটি বায়ুবাহিত রোগ।
কখন একটি রোগী হাসপাতালে যাবে :
বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিটি সামর্থ্যবান ব্যক্তির বাসায় একটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং পালস অক্সিমিটার রাখা উচিত। পালস অক্সিমিটার অক্সিজেন সাজেশন লেভেল ৯২-৯৪ হলে রোগী বাসায় অক্সিজেন দিবে এবং ৯১/৯০ এর নিচে নেমে গেলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উত্তম।
করোণা পজিটিভ ব্যক্তিকে আলাদা ঘরে থাকবে কিনাঃ
অবশ্যই তাকে আলাদা একটি রুমে রাখতে হবে এবং তা কমপক্ষে ১৪ দিন। যদি একটি ঘর থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই সব সময় মাস্ক পড়ে থাকতে হবে এবং কারো সাথে কথা বললেও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলতে হবে।
করোনা রোগীদের খাবারঃ
সব খাবার খেতে পারবে তবে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাল্টা, লেবু, আমলকী এবং অন্যান্য ফল একটু বেশি পরিমাণে খাওয়া জরুরী। ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়াবেটিস ডায়েট চার্ট ফলো করবে।
ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তাঃ
বাংলাদেশ সরকার বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যবস্থা করেছে । সব নাগরিকের উচিত করোণা ভ্যাকসিন নেয়া। তবে ভ্যক্সিন নিলে করোণা পজিটিভ হবে না সেটি ভাবলে ভুল হবে। ভ্যাক্সিন নেয়ার পরেও যথাযথভাবে মাস্ক এবং স্বাস্থবিধি মেনে চলতে হবে।
ডাঃ আতাউদ জাহান রেজাউল (রেজা)
এম.বি.বি.এস (ডি.ইউ),
পি.জি.টি (মেডিসিন- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল), মেডিকেল অফিসার জাতীয় জরুরী স্বাস্থ্য সেবা, স্বাস্থ্য বাতায়ন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর),
মেডিকেল অফিসার (গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল)
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।